মধুপুর উপজেলা আউশনারা ইউনিয়নের এলাকাবাসী অভিনন্দন গ্রামবাসী এবং মহিষমারা কলেজ ক্যাম্পাস

টাংঙ্গাইল মধুপুর উপজেলা আউশনারা ইউনিয়নে স্বপ্নের মহিষমারা কলেজ ক্যাম্পাস।
গ্রামে একটি কলেজ হবে- এই প্রত্যয়ে
সবাই একাট্টা। কলেজটি নির্মাণের
জন্য গ্রামের প্রত্যেক মানুষ
এগিয়েছেন এক পা-দুই পা করে।
সাধ্যমতো বিলিয়েছেন নিজের
বাড়ির গাছ। সেই গাছ বিক্রির টাকা
লেগেছে কলেজ প্রতিষ্ঠার কাজে।
কেউ কেউ দিয়েছেন নগদ টাকাও।
টাঙ্গাইলের মধুপুরের মহিষমারা
গ্রামের মানুষ এভাবে প্রতিষ্ঠা
করেছে কলেজটি। নাম 'মহিষমারা
কলেজ'। গ্রামের শিক্ষিত ও
শিক্ষানুরাগী এক কৃষক দান করেছেন
নিজের ১০০ শতাংশ জমি। সেই
জমিতেই নির্মাণ করা হয়েছে ঘর।
চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই শুরু হবে
কলেজটির কার্যক্রম। এ অনুকরণীয়
দৃষ্টান্তে অভিনন্দন পেতেই পারে
গ্রামবাসী।
গ্রামবাসী জানায়, মহিষমারা
গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ প্রান্তিক
কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। খুব কম মানুষই
শিক্ষিত। অর্থনৈতিক অবস্থাও তাদের
ভালো না। গ্রামে মাধ্যমিক
বিদ্যালয় থাকলেও কলেজ রয়েছে ১৫
কিলোমিটার দূরে মধুপুর শহরে।
আশপাশে কলেজ না থাকায় এসএসসি
পাসের পর অনেকের লেখাপড়া বন্ধ
হয়ে যায়। তাই গ্রামবাসী একমত হয়ে
কলেজ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন। এ জন্য
গ্রামবাসী মূল উদ্যোক্তা হিসেবে
বিএ পাস কৃষক ছানোয়ার হোসেনকে
কৃতিত্ব দেন। কিন্তু ছানোয়ার হোসেন
কৃতিত্ব দেন গ্রামবাসীকে। সবাই
মিলে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়
কলেজটি।
ছানোয়ার হোসেন জানান,
উপজেলার গারোবাজার থেকে
চাপড়ি সড়কের পাশে তার ১০০ শতাংশ
জায়গা ছিল। তিনি কলেজের জন্য সে
জমি দান করেছেন। গ্রামের সাধারণ
মানুষের পক্ষে নগদ অর্থ দেওয়ার
সামর্থ্য নেই। কিন্তু এ কাজে কেউ
পিছিয়ে থাকতে রাজি নয়। তাই কেউ
নগদ অর্থ দেন, আর বেশির ভাগ মানুষ
তাদের ঘরের আঙিনায় যে গাছ ছিল
তা থেকে সাধ্যমতো বিলিয়ে দেন
কলেজের জন্য। এগিয়ে আসেন স্থানীয়
ইউপি চেয়ারম্যান কাজী আবদুল
মোতালেব, স্থানীয় এমপি ড. আবদুর
রাজ্জাকসহ আশপাশের গ্রামের
মানুষও। ছানোয়ার হোসেন জানান,
প্রায় এক হাজার গাছ ওঠে। সেই গাছ
বিক্রি করে কলেজের জন্য প্রথম ঘর
নির্মাণ করা হয়। মহিষমারা গ্রামের
শফিকুল ইসলাম ও শওকত আলী জানান,
তাঁরা তিনটি করে গাছ দান করেছেন।
তাঁরা বলেন, 'এলাকায় কোনো কলেজ
নেই। মেয়েদের লেখাপড়ায় খুব
ঝামেলা হয়। ছেলেমেয়েদের
লেখাপড়ায় অবদান রাখতে আমরা
গাছ দান করেছি।' মুসলেম উদ্দিন বলেন,
'টাকা দেওয়ার মতো অবস্থা নেই।
তাই গাছ দান করেছি। কলেজের জন্যই
এটা করেছি।' পূর্ণচন্দ্র সরকারের
বাড়িতে একটি মাত্র গাছ ছিল।
সেটিই তিনি দান করেছেন কলেজের
জন্য। মহিষমারা কলেজের ভারপ্রাপ্ত
অধ্যক্ষ শামীম তালুকদার জানান, গত
এপ্রিলে ১১ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া
হয়েছে। গত ১১ মে অনুমোদন পাওয়া
গেছে চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে ক্লাস
শুরুর জন্য।
আউশনারা ইউনিয়ন পরিষদের
চেয়ারম্যান ও কলেজ পরিচালনা
পরিষদের সভাপতি কাজী আবদুল
মোতালেব বলেন, এ কলেজের কারণে
শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ
পাবে। দুর্নীতি ও রাজনীতিমুক্ত
থাকবে এ কলেজ। সামাজিক
দায়বদ্ধতা থেকেই সবাই এগিয়ে
এসেছেন। কেউ অর্থ দিয়েছেন, কেউ
টিন দিয়েছেন। তবে বেশির ভাগ
মানুষ গাছ দান করেছেন। মানুষের
আগ্রহের কারণেই কলেজটি প্রতিষ্ঠা
করা সম্ভব হয়েছে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

টাঙ্গাইলের আঞ্চলিক ভাষা বিলুপ্তপ্রায় কিছু শব্দ

সাগরদিঘী নাম করণেে ইতিহাস

মধুপুর জাতীয় উদ্যান জীববৈচিত্র্যে ভরপুর