টাংঙ্গাইল মধুপুরের আনারস বাংলাদেশের সেরা আনারস।
টাঙ্গাইল মধুপুরের নানা জাতের সুস্বাদু আনারসের কথা
শুনলেই জিভে জল এসে যায় | টস টস রসের এই
আনারসকে কেউ কেউ মধুরস বলে থাকেন | এই মধুরস
স্বাদে অনন্য, রসে ভরপুর, দেখতেও সুন্দর |
আনারসের রাজধানী খ্যাত মধুপুর গড় এলাকায় আনারসের
আবাদের ইতিহাস খুব বেশি পুরনো নয়। মধুপুর গড়াঞ্চলের
আউশনারা ইউনিয়নের ইদিলপুর গ্রামের আদিবাসী ভেরেনা
সাংমা ১৯৪০ সালের দিকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে
বেড়াতে যান। সেখানে তিনি দেখতে পান জায়েন্ট কিউ
জাতের রসালো আনারসের আবাদ হয়। সুস্বাদু এ আনারস
খেয়ে তিনি মুগ্ধ হন। পরে সেখানে ছেলেকে পাঠান
আনারসের চারা আনার জন্য। গরুর গাড়িতে করে প্রচুর চারা
এনে লাগান বাড়ির আশপাশে। দুই বছর পর ফল আসে। সুস্বাদু
ও অত্যন্ত রসালো আনারস দেখে এলাকার অন্যরাও শুরু
করেন আনারসের আবাদ। সম্পূর্ণ মধুপুর জুড়েই সারা বছর
আনারসের চাষ হয় |
মধুপুরের অরুণখোলা, ষোলাকুঁড়ি, আউশনাড়া ইউনয়িনে
সবচেয়ে বেশী আনারসের চাষ হয় | সবচেয়ে
জনপ্রিয় আনারস হলো জলডুগি; জায়ান্টকিউট আনারসও মন্দ না |
আনারসের সবচেয়ে বড় হাট জলছত্র | ইতিহাসে থেকে
জানা যায় সে সময় এক আনায় একটি আনারস পাওয়া যেত |
'উত্তর থাইকা আইল ফল, রসে টস টস/
আনা আনা বিকোয়, নাম আনারস'
ছড়াটি এলাকার মানুষের মুখে মুখে ছিল | এভাবেই মধুপুর গড়
এলাকা হয়ে ওঠে আনারস আবাদের প্রধান জনপদ।
প্রাকৃতিগত ভাবে আষাঢ়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে
শ্রাবণের শেষ পর্যন্ত আনারস পাঁকার মৌসুম | তবে সারা বছরই
কমবেশী আনারস পাওয়া যায় | চলতি মৌসুমে টাঙ্গাইল
জেলায় প্রায় ৭ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে আনারসের
আবাদ করা হয়েছে | এর মধ্যে শুধু মধুপুর উপজেলায়ই চাষ
হয়েছে প্রায় ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর। প্রতিদিন ঢাকা, চট্টগ্রাম,
রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট, বগুড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা
হয় এ অঞ্চলের আনারস। ভরা মৌসুমে প্রতিদিন
টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার পাঁচটি বাজার থেকে সারা
দেশে ২০০-র বেশি ট্রাকভর্তি আনারস যায়। এরমধ্যে
জলছত্র বাজার থেকেই লোড হয় ১০০'র বেশি ট্রাক।
তবে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে আনারসের সেই পুরনো
স্বাদ। যে আনারস পরিপূর্ণ হতে সময় লাগে ১৮ মাস। চাষিরা
সেই আনারসে মাত্রাতিরিক্ত হরমোন ব্যবহার করে ৫-৬
মাসে পরিপক্ব করে বাজারজাত করছে। এতে আনারসের
আগের সেই স্বাদ ও গন্ধ নেই। এতে বড় ধরনের হুমকির
মধ্যে পড়েছে আনারসের রাজধানীর সুনাম।
হরমোনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জেনেও কিছু
অসাধু ব্যবসায়ীদের ফাঁদে পড়ে বেশি লাভের আশায় এটি
ব্যবহার করছেন চাষিরা। এসর্ম্পকে সচেতনতা বাড়ানো
প্রয়োজন |
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন