দেখে নিন ৪শ’ বছরের পুরনো প্রাচীন নির্দশন টাঙ্গাইলের আতিয়া মসজিদ


৪ শ’ত বছরের পূরনো দেশের অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার আতিয়া জামে মসজিদ। মসজিদটির তত্ত্বাবধানে রয়েছে জাতীয় প্রত্নতত্ত বিভাগ। ষোড়শ শতাব্দী থেকে শুরু করে এই মসজিদটিতে এখনও নিয়মিত জামাতে নামাজ আদায় চলছে। আরবি ‘আতা’ থেকে ‘আতিয়া শব্দটির উৎপত্তি, যার বুৎপত্তিগত অর্থ হল ‘দান কৃত’।
আলি শাহান শাহ্ বাবা আদম কাশ্মিরী (র.) কে সুলতান আলাউদ্দিন হুসাইন শাহ টাঙ্গাইল জেলার জায়গিরদার নিয়োগ দান করলে তিনি এই অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করেন। সে সময় তিনি ইসলাম ধর্ম প্রচারের এবং আনুষঙ্গিক ব্যয় নির্বাহের জন্য আফগান নিবাসী কররানী শাসক সোলাইমান কররানীর কাছ থেকে সংলগ্ন এলাকা দান বা ওয়াকফ্ হিসাবে লাভ করেন। এবং এই এলাকাটি তাঁকে দান করায় এই অঞ্চলটির নাম হয়েছে ‘আতিয়া’।
পরবর্তীতে আদম কাশ্মিরীর পরামর্শক্রমে সাঈদ খান পন্নী নামক সুফিজির এক ভক্তকে মোগল সম্রাট জাহাঙ্গির আতিয়া পরগণার শাসন কর্তা হিসেবে নিয়োগ দান করেন। এই সাঈদ খান পন্নীই ১৬০৮ সালে আদম কাশ্মিরীর কবরের সন্নিকটে আতিয়া মসজিদ নির্মাণ করেন। মুহাম্মদ খাঁ নামক তৎকালীন এক প্রখ্যাত স্থপতি এই মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা ও নির্মাণ কাজে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। রওশন খাতুন চৌধুরাণী ১৮৩৭ সালে এবং আবুল আহমেদ খান গজনবী ও করটিয়ার জমিদার ওয়াজেদ আলী খান পন্নী সহ কয়েকজন মিলে ১৯০৯ সালে মসজিদটির সংস্কার করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকার এই মসজিদটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে অধিগ্রহণ করেন। দেলদুয়ার উপজেলা সদর থেকে মসজিদটির দুরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। চুন, শুরকি নির্মিত মসজিদটি পূর্ব-উত্তর পাশে রয়েছে সুনিপুন দূর্লভ কারুকার্য। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪২ ফুট প্রস্থ ৩২ ফুট এবং উচ্চতা ৪৪ ফুট। একটি বড় আকৃতির গম্বুজ সহ মোট ৪টি গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের দেয়াল ৮ থেকে সারে ৮ ফুট প্রশস্থ। লাল ইট দ্বারা নির্মিত এই মসজিদটি আকারে বেশ ছোট, মাত্র ১৮.২৯ মিটার (৫৯ ফুট) ১২.১৯ মিটার (৪০ ফুট) এবং দেয়ালের পুরুত্ব ২.২৩ মিটার (সাড়ে ৭ ফুট)। এর চারকোণে ৪টি অষ্টকোণাকৃতীর মিনার রয়েছে, যার উপরের অংশটি ছোট গম্বুজের আকৃতি ধারণ করেছে।
সুলতানি ও মুঘল এই দুই আমলেরই স্থাপত্যরীতির সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে এই মসজিদের নির্মাণ শৈলীতে। প্রাচীন নিদর্শন হিসেবে ঐতিহ্যবাহী আটিয়া জামে মসজিদটি স্থান পেয়েছে উইকিপিডিয়ায়। একসময় সরকার মসজিদটিকে দেশবাসীর কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর খোরশেদ আলম দায়িত্বে থাকাকালীন দশ টাকার নোটের মধ্যে আটিয়া মসজিদটির ছবি মুদ্রণ করে। কিন্তু সরকার পরিবর্তন ও আওয়ামীলীগ সরকারের সদিচ্ছার অভাবে মসজিদটির ছবির পরিবর্তে বঙ্গবন্ধুর ছবি মুদ্রণ করা হয়। মসজিদের ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন আহাম্মেদ জানান, ২০০১ সালের পর থেকে মসজিদটিতে কোন চুনকাম করা হয়নি। বিভিন্ন অংশে শেওলা পড়ে কালো হয়ে গেছে। দেয়ালের ইট বালি খসে পড়ছে, মসজিদটির প্রধান গম্বুজের একটি অংশ ভেঙ্গে পড়ায় বৃষ্টি হলে মসজিদে পানি পড়ে। বিশেষত বর্ষাকালে মুসল্লীদের নামাজ আদায়ে দূর্ভোগে পড়তে হয়। ইমাম আরও জানান, জাতীয় প্রত্নতত্ত বিভাগের ঢাকা বিভাগীয় প্রধান সরজমিন পরিদর্শন করে মসজিদটির সংস্কারের ব্যাপারে আশ্বাস দিয়ে ছিলেন কিন্তু তার এই আশ্বাসের কোন বাস্তবায়ন হয়নি। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে স্থানীয় এমপি ও জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে চিঠি পাঠানো হলেও কার্যত তা বৃথা যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে জরুরি ভিত্তিতে মসজিদটির সংস্কার প্রয়োজন। মসজিদটি দেখার জন্য এখনও অসংখ্য দর্শনার্থী ভীড় করেন। এলাকাবাসী ও দর্শনার্থীরা মসজিদটির সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানিয়েছেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

টাঙ্গাইলের আঞ্চলিক ভাষা বিলুপ্তপ্রায় কিছু শব্দ

সাগরদিঘী নাম করণেে ইতিহাস

মধুপুর জাতীয় উদ্যান জীববৈচিত্র্যে ভরপুর