শাল, গজারি, আদিবাসী, আনারস, রাবার চাষ,হচ্ছে ঐতিহ্যের মধুপুরে


পর্যটন ও ঐতিহাসিক দিক দিয়ে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা দেশব্যাপী অতি পরিচিত একটি নাম।শাল,গজারি, আদিবাসী, আনারস, রাবার চাষ,সন্ন্যাস বিদ্রোহের আনন্দমঠসহ নানা ঐতিহ্যের উপাদান এ মধুপুরে। রাজধানী ঢাকা থেকে ১৪২ কিমি. এবং টাঙ্গাইল থেকে ৪৬ কিলোমিটার উত্তরে এ মধুপুরের অবস্থান। বছরজুড়েই মধুপুরের নৈসর্গিক প্রকৃতি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।
আগের ঘন বন নেই। তবুও যতটুকু আছে এত টুকুতেই মন জুড়িয়ে যাবে। দেখে আর স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে আন্দাজ করতে পারবেন বনের অতীত। নদী, বন ও বনবাসী গারো-কোচসহ নানা নামের আদিবাসী অধ্যুষিত মধুপুরের প্রধান আকর্ষণ শাল বন। এখানে আছে আজুলি, কাইকা, পলাশ, হরিতকি, বহেডা, আমলকি, সোনালু, জয়না, গান্ধারী, সেগুনসহ হাজারো প্রজাতির উদ্ভিদ, গুল্ম ও লতাপাতা। আছে বিরল প্রজাতির হনুমান, বানর, হরিণ, বন মোরগ, বাগডাসা, অজগর, বহু প্রকারের প্রজাপতি এবং নানা প্রজাতির পাখি। বনের ভেতর লহুরিয়ায় প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে তোলা চিড়িয়াখানা, আছে শতাধিক হরিণ। চিড়িয়াখানার আশপাশে বাস করে অসংখ্য বানর, হনুমান। টাওয়ারে উঠে সবুজ দিগন্তে হারিয়ে যাবেন। নির্জন ও নির্মল প্রকৃতিকে প্রাণ ভরে উপভোগ করতে পারবেন, দেখতে পাবেন বিভিন্ন বন্য প্রাণী, পাখি। ভ্রমণ সময়ের সঙ্গে মিলে গেলে আদিবাসী সংস্কৃতির যে কোনো অনুষ্ঠান হতে পারে বাড়তি আকর্ষণ। মধুপুর বনাঞ্চলের অরনখোলা মৌজার বনভূমিতে অবস্থিত বন বিশ্রামাগারটিই দোখলা রেস্ট হাউজ। টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কের রসুলপুর নামক স্থান হতে ৮কি.মি. উত্তর- পশ্চিমে এর অবস্থান। ১৯৬২-৬৩ সনে এ বিশ্রামাগারটি নির্মাণ করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে এর সংস্কার করা হয়। মধুপুর গড় অঞ্চলের প্রায় ৬৭,০০০.০০ একর বনভূমি পরিদর্শন, দর্শন, উন্নয়ন ও তদারকির জন্য এ বিশ্রামাগারটি তৈরী করা হয়। এঅঞ্চলের বনভূমির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা, বন্য প্রাণী ও জীব-
বৈচিত্র অবলোকনকরার সুবিধা এ রেস্ট হাউজের মাধ্যমে পাওয়া যায়। অধিকন্তু বৈজ্ঞানিক গবেষণা, উদ্ভিদও প্রাণী সম্পর্কিত শিক্ষা কার্যক্রমে বিশ্রামাগারটি গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকরে। আদিবাসীদের জীবনধারা বিচিত্র। দোখলা পঁচিশমাইল রাসত্মার শেষে জলছত্র এলাকায় আদিবাসীদের নিজস্ব তাঁতে বুনান বিভিন্ন ধরণের রেশম বস্ত্র শিল্পেরবিক্রয় কেন্দ্র ‘‘কারিতাস’’। জানা যায় বাংলাদেশের সংবিধান রচনার সাথেও দোখলা রেস্ট হাউজটির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। মধুপুরের দোখলা রেস্ট হাউজ এলাকাতেই সালমান শাহ-শাবনুরের ‘আনন্দ অশ্রু’ চলচ্চিত্রটি চিত্রায়িত হয়েছিল।
আরও যা দেখার আছে : এখানে আছে সাত হাজার একরের সরকারি রাবার বাগান। খুব ভোর থেকেই শ্রমিকরা গাছের বাঁকল কেটে সংগ্রহ করে গাছের কাঁচা (রস) রাবার। সংগৃহিত কাঁচা রাবার কারখানায় জমিয়ে ধুঁম ঘরে নিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। বেশ কয়েকটি রাবার বাগানে এরকম দৃশ্য চোখে পড়বে। সন্তোষপুর রাবার বাগানে যাওয়ার পথে কাকরাইদ বিএডিসির সুদৃশ্য ক্যাম্পাস। এর পাশেই জয় তেঁতুল গ্রামের গোজাখালের বিখ্যাত লক্ষ্মীজোড়া ঝরণা এখন ইতিহাস। একই পথে ঘাটাইল সীমানায় ইতিহাস প্রসিদ্ধ সাগরদীঘি। শতাব্দী প্রাচীন হিজলতলা মন্দির। কাকরাইদ থেকে ময়মনসিংহ সড়ক ধরে এগুলে বন গবেষণা কেন্দ্রের বিশাল ভেষজ উদ্যান, বৈষ্ণবদের আড়াইশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী সনাতন মন্দির, জলছত্র মিশন, বেলজিয়ামের অনুদানে নির্মিত বৃহত্তম কুষ্ঠ ব্যাধি হাসপাতাল, কারিতাস সিল্ক ফ্যাক্টরি ও শো-রুম। এখান থেকে কেনা যায় সিল্কের নানা পোশাক। মধুপুর পৌর শহরের মধ্যেই ছিল ব্রিটিশবিরোধী ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহীদের আশ্রয়স্থল ‘আনন্দমঠ’। বোয়ালী গ্রামে কাদের মাস্টারের বাড়িতে তার সামান্য চিহ্ন এখনও আছে। পৌর শহরে আছে সনাতনীদের মদন গোপাল আঙ্গিনা মন্দির, দুর্গাপুর গ্রামে আছে পঞ্চপীরের মাজার। আম্বাড়িয়া গ্রামে পরিত্যাক্ত জমিদার বাড়ি। মধুপুর সদর থেকে ১৩ কিমি. দূরে ধনবাড়ী পৌর শহরে নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর নবাববাড়ি, নবাব প্যালেস, মসজিদও অনেককে আকৃষ্ট করে। (এসএম শহীদ, ঘাটাইলডটকম)/-

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

টাঙ্গাইলের আঞ্চলিক ভাষা বিলুপ্তপ্রায় কিছু শব্দ

সাগরদিঘী নাম করণেে ইতিহাস

মধুপুর জাতীয় উদ্যান জীববৈচিত্র্যে ভরপুর